,

জেসি রহমানের সেই উদ্যোগটাই আজ ‘জেসিস কিচেন, হবিগঞ্জ’

“উদ্যোক্তা জীবন শুরুর ক্ষেত্রে সবচাইতে বেশী সমর্থন ছিল বাবার, প্রথম দিকে আমার
বানানো ফুড আইটেমগুলো প্রথম আমার বাবাই ডেলিভারি চার্জসহ ক্রয় করে খেয়েছিলেন”

জাবেদ তালুকদার : ‘আমি ২০১৫ তে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি তখন থেকেই ঘরে বসে অলস সময় কাটাচ্ছিলাম। ভাবলাম আর কতো অলস সময় কাটাই, নিজের প্রোফাইল তৈরি করার মতো কিছু একটা অন্তত করা প্রয়োজন। আর যেই ভাবনা সেই কাজ, একজন অনভিজ্ঞ হিসেবে আমার জন্য কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। আমার উদ্যোক্তা জীবন শুরুর ক্ষেত্রে সবচাইতে বেশী সমর্থন ছিল আমার বাবার। সংসারের দ্বায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ছোট দুই ছেলের লালন-পালনে অসুবিধা হবে ভেবে আমার স্বামী প্রথমে আমাকে সমর্থন করেননি। তখন কাজের প্রতি আমার আগ্রহ দেখে আমার বাবা আমার স্বামীর কাছ থেকে এক মাসের সময় নিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘সংসারের দ্বায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ছেলেদের দেখাশোনা এবং পড়াশোনায় যদি কোন ব্যাঘাত ঘটে তাহলে সে (জেসি) কাজ ছেড়ে দিবে।’ আমার প্রতি আমার বাবার অগাধ বিশ্বাস ছিল। সে কারনেই প্রথম দিকে আমার উৎসাহ যোগাতে বাবা নিজেই আমার বানানো ফুড আইটেম ডেলিভারি চার্জ সহ ক্রয় করে খেয়েছিলেন।’ এভাবেই নিজের উদ্যগে “জেসিস কিচেন হবিগঞ্জ” এর শুরুর গল্প দৈনিক হবিগঞ্জ সময়কে শুনান উদ্যোক্তা জেসি রহমান।
সুন্দর, সুস্বাদু আর স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের একটি বিশ্বস্থ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইতিমধ্যেই হোমমেইড ফুড ফ্যানদের মনে ঠাঁই করে নিয়েছে ‘জেসিস কিচেন হবিগঞ্জ’। জেসিস কিচেন হবিগঞ্জ-এর বর্তমান গল্পটা অর্জন আর সাফল্যে ভরপুর হলেও শুরুর গল্পটা মোটেও সেরকম ছিল না, সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম ছিল। শুরুর গল্পটা গল্পটা শুনে হয়তো কারো মনেই হবে না, জেসি রহমানের সেই উদ্যোগটাই আজকের ‘জেসিস কিচেন হবিগঞ্জ’।
জেসি রহমানের এই পর্যায়ে পৌঁছানোর নৈপথ্যে রয়েছে নিজের পরিশ্রম, এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় আর পরিবারের সমর্থন। নানা প্রতিবন্ধকতাও মোকাবেলা করতে হয়েছে জেসি রহমানকে, তবে কখনোই দমে যাননি তিনি, নিজের লক্ষ্যের দিকেই এগিয়ে চলেছেন তিনি। নানা প্রতিবন্ধকতাও মোকাবেলা করতে হয়েছে তাকে, এরমধ্যে অন্যতম যেটি ছিল- কাছের মানুষগুলোর নিরুৎসাহিতা । তাদের ভাষ্যমতে ‘তার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো থাকা সত্ত্বেও কেন তিনি রান্নার কাজ করতে যান? তার মনে হয় টাকার অভাব পরেছে।’ এ ধরনের কথাগুলোই তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। তবু তিনি থামেন নি, এবং ভবিষ্যতেও আরো দূরে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেছেন।
২০২০ইং সনের অক্টোবরে নিজের উদ্যোগ ‘জেসিস কিচেন, হবিগঞ্জ’ নামে একটি পেজ কাজ শুরু করেন তিনি, শুরুতে প্লেন কেক নিয়ে কাজ করলেও ক্রমান্বয়ে বার্থডে কেক, গায়ে হলুদের কেক সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কেক নিয়ে কাজ করেন। ২ বছরে নিজের উদ্যোগ থেকে এখন পর্যন্ত ১০ লক্ষাধিক টাকার খাবার বিক্রি করেছেন তিনি।
২ বছর ফূর্তি উপলক্ষে নিজের অনুভূতি জানাতে তিনি বলেন- “কাজ শুরুর পর অনেকেই আমার কাছে বিজনেস সেল বা প্রফিট সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। যদিও আমি কোন প্রফিটের আশায় বা এটা করে ফ্যামিলি চালাতে হবে এমন কোন চিন্তা-চেতনা নিয়ে আসি নি। এটা নিতান্তই আমার শখের এবং কুকিংয়ের প্রতি আমার আলাদা একটা টানও বলা যেতে পারে। তবে আলহামদুলিল্লাহ শখের উদ্যোগ থেকে খুব ভালো রেসপন্স পেয়েছি এবং প্রতি মাসেই গড়ে ৪০ হাজার বা তার চাইতে বেশি টাকার প্রোডাক্ট (কেক) বিক্রি হচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ, এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার কেক বিক্রি হয়েছে।” এর পুরো ক্রেডিটটাও তিনি ‘জেসিস কিচেন হবিগঞ্জ’ এর সকল ক্রেতা এবং শুভাকাঙ্খীদের দিতে ভূলেননি।
তিনি আরো বলেন- ‘শুরুতে আমার অনেক পরিচিত মানুষই আমাকে কটু কথায় উপহাস করেছেন, আমাকে এই কাজে মানায় না, আমি এই কাজ করলে সমাজ আমাকে বাঁকা চোখে দেখবে এমনও বলেছেন, আমাকে অবজ্ঞা করেছেন, আমাকে অনুৎসাহ তো দিয়েছেনই পাশাপাশি আমাকে কোটিপতি বলেও অপমানিত করার চেষ্টা করেছেন। চাইলে আমি মুখেই তাদের জবাব দিতে পারতাম কিন্তু বিশ্বাস ছিলো এবং এখনো আছে- সৎভাবে কাজ করলে কোন না কোন সময় তার ফল পাওয়া যায় এবং সমালোচনাকারীদের সঠিক জবাবও সফলতার মাধ্যমেই দেওয়া উচিত। এ ধরনের মানসিকতা সম্পন্ন লোকদের বলবো- যদি কোন নতুন উদ্যোক্তা বা যারা নতুন কিছু করতে চায় তাদের হেল্প না করতে পারেন, উৎসাহ না দিতে পারেন দয়া করে তাদের সমালোচনা করে মনোবল ভেঙে দিবেন না, তাদের অনুৎসাহিত করবেন না। কারণ একজন মানুষের স্বপ্নকে যারা প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই ভেঙে ফেলে সৃষ্টিকর্তা তো তাদের অপছন্দ করেনই মানুষও তাদের সম্মান করেন না, ঘৃণার চোখে দেখেন। তাই আসুন সবাই মিলে নতুনদের সাপোর্ট করি, তাদের স্বপ্ন পূরণে সহায়ক হই এবং তাদের উৎসাহিত করি।


     এই বিভাগের আরো খবর